"https://www.facebook.com/sonatandhormo>

Sunday, January 11, 2015

মূর্তি পূজার রহস্য

মূর্তি পূজার রহস্যঃ মানুষের মন স্বভাবতই চঞ্চল।পার্থিব জগতে আমাদের চঞ্চল মন নানা কামনা বাসনা দিয়ে আবদ্ধ। আমরা চাইলেই এই কামনা বাসনা বা কোন কিছু পাবার আকাংক্ষা থেকে মুক্ত হতে পারি না।(ধরুন একজন শিক্ষার্থী তাঁর শিক্ষা জীবনের বাসনা থাকে পরীক্ষায় প্রথম হউয়া।এ জন্য সে বিদ্যার দেবী সরস্বতীর আরাধনা করে।) তীব্র গতির এই মনকে সংযত করা, স্থির করার ব্যবস্থা করা হয় এই সগুন ঈশ্বরে
র বিভিন্ন রুপের মাধ্যমে। মনে রাখতে হবে আমরা কখনই ঈশ্বরের বিশালতা বা অসীমতা কে আমদের সসীম চিন্তা দিয়ে বুঝতে পারব না। বরং সর্বগুণময় ঈশ্বরের কয়েকটি বিশেষ গুনকেই বুঝতে পারব।আর এ রকম এক একটি গুনকে বুঝতে বুঝতে হয়ত কোন দিন সেই সর্ব গুণময়কে বুঝতে পারব।আর মূর্তি বা প্রতিমা হল এসকল গুনের রূপকল্প বা প্রতীক। এটা অনেকটা গনিতের সমস্যা সমাধানের জন্য ‘x’ ধরা। আদতে x কিছুই নয় কিন্তু এক্স ধরেই হয়ত আমরা গনিতের সমস্যার উত্তর পেয়ে যাই। অথবা ধরুন জ্যামিতির ক্ষেত্রে আমরা কোন কিছু বিন্দু দিয়ে শুরু করি। কিন্তু বিন্দুর সংজ্ঞা হল যার দৈর্ঘ, প্রস্থ ও বেধ নাই কিন্তু অবস্থিতি আছে – যা আসলে কল্পনা ছাড়া আর কিছু নয়।অথচ এই বিন্দুকে আশ্রয় করেই আমরা প্রশান্ত মহাসাগরের গভীরতা থেকে হিমালয়ের উচ্চতা সব মাপতে পারি। আবার ধরুন ভূগোল পড়ার সময় একটি গ্লোব রেখে কল্পনা করি এটা পৃথিবী আবার দেয়ালের ম্যাপ টানিয়ে বলি এটা লন্ডন, এটা ঢাকা এটা জাপান। কিন্তু ঐ গ্লোব বা ম্যাপ কি আসলে পৃথিবী? অথচ ওগুলো দেখেই আমরা পৃথিবী চিনছি। তেমনি মূর্তির রূপ কল্পনা বা প্রতিমা স্বয়ং ঐসকল দেবতা নন তাঁদের প্রতীক, চিহ্ন বা রূপকল্প। এগুলো রূপকল্প হতে পারে কিন্তু তা মনকে স্থির করতে সাহায্য করে এবং ঈশ্বরের বিভিন্ন গুন সম্পর্কে ধারনা দেয়, শেখায় ঈশ্বর সত্য। সব শেষে পরম ব্রহ্মের কাছে পৌছাতে সাহায্য করে। হিন্দু ধর্মে পূজা একটি বৈশিষ্ট্য। কল্পনায় দাড়িয়ে সত্য উত্তরণই পূজার সার্থকতা। আমাদের ধর্মে ঈশ্বরের নিরাকার ও সাকার উভয় রূপের উপাসনার বিধান আছে। নিরাকার ঈশ্বরের কোন প্রতিমা নাই, থাকা সম্ভবও না। যারা ঈশ্বরের অব্যক্ত বা নিরাকার উপাসনা করেন তাঁদের বলে নিরাকারবাদি। আর যারা ঈশ্বরের সাকার রূপের উপাসনা করেন তাঁরা সাকারবাদি। এজন্য গীতায় বলা আছে, যারা নিরাকার, নির্গুণ ব্রহ্মের উপাসনা করেন তারাও ঈশ্বর প্রাপ্ত হন। তবে নির্গুণ উপাসকদের কষ্ট বেশি। কারণ নিরাকার ব্রহ্মে মনস্থির করা মানুষের পক্ষে খুবই ক্লেশকর।
ঈশ্বর ও দেবতাঃ প্রথমেই বলে রাখা দরকার সনাতন দর্শনে বহু ঈশ্বরবাদের স্থান নাই বরং আমরা একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী।হিন্দু শাস্ত্র মতে , ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয়।সনাতন দর্শন বলে, ঈশ্বর স্বয়ম্ভূ অর্থাৎ ঈশ্বর নিজে থেকে উৎপন্ন, তার কোন স্রষ্টা নাই, তিনি নিজেই নিজের স্রষ্টা। আমাদের প্রাচীন ঋষিগন বলে গিয়েছেন, ঈশ্বরের কোন নির্দিষ্ট রূপ নেই(নিরাকার ব্রহ্ম) তাই তিনি অরূপ, তবে তিনি যে কোন রূপ ধারন করতে পারেন কারণ তিনিই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। ঋকবেদে বলা আছে, ঈশ্বর ‘একমেবাদ্বিতীয়ম’- ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয়।ঈশ্বর বা ব্রহ্ম (ব্রহ্মা নন) সম্পর্কে আরও বলা হয়, ‘অবাংমনসগোচর’ অর্থাৎ ঈশ্বরকে কথা(বাক), মন বা চোখ দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না, তিনি বাহ্য জগতের অতীত।ঈশ্বর সম্পর্কে ঋকবেদে বলা আছে- ‘একং সদ বিপ্রা বহুধা বদন্তি (ঋক-১/৬৪/৪৬) অর্থাৎ সেই এক ঈশ্বরকে পণ্ডিতগণ বহু নামে বলে থাকেন। ‘একং সন্তং বহুধন কল্পায়ন্তি’ (ঋক-১/১১৪/৫) অর্থাৎ সেই এক ঈশ্বরকে বহুরূপে কল্পনা করা হয়েছে। ‘দেবানাং পূর্বে যুগে হসতঃ সদাজায়ত’ ( ঋক-১০/৭২/৭) অর্থাৎ দেবতারও পূর্বে সেই অব্যাক্ত(ঈশ্বর) হতে ব্যক্ত জগত উৎপন্ন হয়েছে। ঈশ্বর এক কিন্তু দেবদেবী অনেক। তাহলে দেব দেবী কারা? মনে রাখতে হবে দেব দেবীগণ ঈশ্বর নন। ঈশ্বরকে বলা হয় নির্গুণ অর্থাৎ জগতের সব গুনের(quality) আধার তিনি। আবার ঈশ্বর সগুনও কারণ সর্ব শক্তিমান ঈশ্বর চাইলেই যে কোন গুনের অধিকারী হতে পারেন এবং সেই গুনের প্রকাশ তিনি ঘটাতে পারেন। দেব দেবীগন ঈশ্বরের এই সগুনের প্রকাশ।অর্থাৎ ঈশ্বরের এক একটি গুনের সাকার প্রকাশই দেবতা। ঈশ্বর নিরাকার কিন্তু তিনি যে কোন রূপে সাকার হতে পারেন আমাদের সামনে কারণ তিনি সর্ব ক্ষমতার অধিকারী। যদি আমরা বিশ্বাস করি ঈশ্বর সর্বশক্তিমান তাহলে নিরাকার ঈশ্বরের সাকার গুনের প্রকাশ খুবই স্বাভাবিক।তাই ঈশ্বরের শক্তির সগুন রূপ দুর্গা, কালী, পার্বতী;বিদ্যার সগুন রূপ সরস্বতী; ঐশ্বর্যের সগুন রূপ লক্ষ্মী, মৃত্যুর রূপ যম। তেমনি ঈশ্বর যখন সৃষ্টি করেন তখন ব্রহ্মা ( ব্রহ্ম নয়), যখন পালন করেন তখন বিষ্ণু আর প্রলয়রূপে শিব।এজন্য বলা হয়ে থাকে ঈশ্বরই ব্রহ্মা,তিনিই বিষ্ণু, তিনিই শিব। তাহলে আমারা এখন বুঝতে পারছি দেব দেবী অনেক হতে পারে কিন্তু ঈশ্বর এক এবং দেবতাগণ এই পরম ব্রহ্মেরই বিভিন্ন রূপ।তাই হিন্দুরা বহু দেবোপাসক(বস্তুত দেবোপাসনা ঈশ্বর উপাসনাই) হতে পারে তবে বহু ঈশ্বরবাদী নন। এতক্ষন আপনাদেরকে বললাম ঈশ্বর আর দেবতার পার্থক্য। এখন বলব তাহলে আমরা কেন এ সকল দেব দেবীগণের মূর্তি পূজা করি।

No comments:

Post a Comment